গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এখতিয়ার
বর্ণিত হয়েছে। সংবিধানের ৯৪ (১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, আপীল বিভাগ
এবং হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য সুপ্রীম কোর্ট গঠিত হবে।
সুপ্রীম কোর্টের এই দুই বিভাগের পৃথক এখতিয়ার রয়েছে। সংবিধান ও সংবিধানের
পাশাপাশি দেশের সাধারণ আইন (সংসদ কর্তৃক পাশকৃত আইন) এই এখতিয়ারের
উৎস ।
আপীল বিভাগের এখতিয়ার
সংবিধান আপীল বিভাগকে নিম্নলিখিত এখতিয়ার প্রদান করেছে:
ক) আপীলের এখতিয়ার: সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, হাইকোর্ট
বিভাগের রায়, ডিক্রী,
আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল শুনানী ও তা নিষ্পত্তির এখতিয়ার
আপীল বিভাগের থাকবে। আপীল
বিভাগের নিকট সেক্ষেত্রে অধিকার বলে আপীল করা যাবে যেক্ষেত্রে হাইকোর্ট
বিভাগ-(ক) এই মর্মে
সার্টিফিকেট প্রদান করেন যে, মামলাটির সাথে সংবিধান ব্যাখ্যার বিষয়
আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত; বা (খ)
কোন মৃত্যুদন্ড বহাল করেছেন কিংবা কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ডে বা
যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছেন; বা (গ)
উক্ত বিভাগের অবমাননার জন্য কোন ব্যক্তিকে দন্ড প্রদান করেছেন; এবং
অন্যান্য ক্ষেত্রে, যদি আপীল বিভাগ
আপীল করার অনুমতি দেয় এবং যদি সংসদে আইন দ্বারা এরূপ কোনো বিধান
প্রণয়ন করা হয়ে থাকে।
খ) আপীল বিভাগের পরোয়ানা জারী ও নির্বাহ: সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের
অধীন কোন ব্যক্তির হাজিরা বা
দলিলপত্র উদ্ঘাটন বা দাখিল করার আদেশসহ আপীল বিভাগের নিকট বিচারাধীন
যে কোন মামলা বা বিষয়ে
সম্পূর্ণ ন্যায় বিচারের জন্য যেরূপ প্রয়োজনীয় হতে পারে, আপীল বিভাগ
সেরূপ নির্দেশ, আদেশ, ডিক্রী বা রীট
জারী করতে পারে।
গ) পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা: সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে
যে, সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত
যে কোন বিধি সাপেক্ষে আপীল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত কোন রায় বা প্রদত্ত
আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রীম
কোর্ট (আপীল বিভাগ) বিধিমালা, ১৯৮৮ এর ৪র্থ অধ্যায় এর ২৬ আদেশে আপীল
বিভাগের পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা ও পদ্ধতিগত বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
ঘ) উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার: সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে
যে, যদি কোন সময় রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এরূপ কোন
প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে, যা এমন
ধরনের ও এমন জনগুরুত্বপূর্ণ যে, সে সর্ম্পকে সুপ্রীম কোর্টের মতামত
গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা হলে তিনি প্রশ্নটি আপীল বিভাগের বিবেচনার
জন্য প্রেরণ করতে পারবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত
শুনানীর পর প্রশ্নটি সর্ম্পকে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে
পারবে।
ঙ) সুপ্রীম কোর্টের বিধি প্রণয়ন ক্ষমতা: সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে
কোন আইন সাপেক্ষে, সুপ্রীম কোর্ট রাষ্ট্রপতির
অনুমোদনক্রমে প্রত্যেক বিভাগের এবং অধস্তন যে কোন আদালতের রীতি ও
পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধি প্রণয়ন
করতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার
সংবিধানের ১০১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, সংবিধান বা যে কোন আইনের
দ্বারা হাইকোর্ট বিভাগের উপর যেরূপ আদি, আপীল ও অন্য প্রকার এখতিয়ার
ও ক্ষমতা অর্পন করা হবে উক্ত বিভাগের সেরূপ এখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকবে।
ক) আদি এখতিয়ার: হাইকোর্ট বিভাগের আদি এখতিয়ার বলতে সেই এখতিয়ারকে
বোঝায় যেখানে এটি প্রথম
বিচারাদালত হিসেবে একটি মামলা বা মোকদ্দমার শুনানী করতে পারে। সংবিধান
হাইকোর্ট বিভাগকে
সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন বিশেষ আদি এখতিয়ার প্রদান করেছে,
যার অধীনে হাইকোর্ট বিভাগ
সংবিধানের তৃতীয় ভাগ দ্বারা অর্পিত মৌলিক অধিকারসমূহ বলবৎ করতে পারে
এবং বিচার বিভাগীয়
পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। আরো কিছু সাধারণ আইন রয়েছে
(সংসদ কর্তৃক পাশকৃত আইন)
যথা-কোম্পানী আইন, ১৯৯৪; অ্যাডমিরালটি কোর্ট আইন, ২০০০; ব্যাংক কোম্পানী
আইন, ১৯৯১;
উত্তারাধিকার আইন, ১৯২৫ এর অধীনে উইল এবং প্রবেট; বিবাহ বিচ্ছেদ
আইন, ১৮৬৯; গণপ্রতিনিধিত্ব
আদেশ, ১৯৭২; বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৩; আদালত
অবমাননা আইন, ১৯২৬ ইত্যাদি যা
হাইকোর্ট বিভাগের সাধারণ/আদি এখতিয়ারের অধীনে পড়ে। এছাড়াও দেওয়ানী
কার্যবিধি, ১৯০৮ এবং সুপ্রীম
কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) বিধিমালা, ১৯৭৩ এ হাইকোর্ট বিভাগকে এখতিয়ার
প্রদান করা হয়েছে।
খ) আপীলের এখতিয়ার: যেকোনো আইন যেকোনো বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগকে এখতিয়ার
প্রদান করতে পারে। ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮; দেওয়ানী কার্যবিধি,
১৯০৮; মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ৪২ ধারা; কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯
এর ১৯৬ঘ ধারা এবং হাইকোর্ট বিভাগ বিধিমালা, ১৯৭৩ হাইকোর্ট বিভাগকে
আপীলের এখতিয়ার প্রদান করেছে।
গ) পুনঃনিরীক্ষণের এখতিয়ার: (ক) দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১১৫
ধারা হাইকোর্ট বিভাগকে পুনঃনিরীক্ষণের এখতিয়ার প্রদান করেছে। হাইকোর্ট
বিভাগ তার অধীনস্ত আদালতের সিদ্ধান্ত পরীক্ষা করতে পারে।
(খ) ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪৩৯ ধারা হাইকোর্ট বিভাগকে তার
অধীনস্ত আদালতের ফৌজদারী বিষয়গুলির পুনঃনিরীক্ষণের এখতিয়ার প্রদান
করেছে। অধিকন্তু হাইকোর্ট বিভাগ ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ক ধারার অধীন
সহজাত ক্ষমতাবলে এই বিধির অধীন প্রদত্ত কোন আদেশ কার্যকর করার জন্য
বা কোন আদালতের কার্যক্রমের অপব্যবহার রোধ করার জন্য বা অন্য কোনভাবে
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় যেকোন আদেশ প্রদান করতে
পারে।
ঘ) পুনর্বিবেচনার এখতিয়ার: দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১১৪ ধারা
হাইকোর্ট বিভাগকে পুনর্বিবেচনার এখতিয়ার প্রদান করেছে। হাইকোর্ট
বিভাগ বিধিমালা, ১৯৭৩ এর ২য় ভাগের ১০ম অধ্যায় এবং দেওয়ানী কার্যবিধি,
১৯০৮ এর ৪৭ আদেশে পুনর্বিবেচনার পদ্ধতিগত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ঙ) অধস্তন আদালতসমূহের উপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার:
সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে
যে, হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের উপর উক্ত
বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ
ক্ষমতা থাকবে।
চ) অধস্তন আদালত থেকে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা স্থানান্তর: সংবিধানের
১১০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে যে, হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে
প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত বিভাগের কোন অধস্তন আদালতে বিচারাধীন কোন
মামলায় এই সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত আইনের এমন গুরুত্বপূর্ণ
প্রশ্ন বা এমন জন-গুরুত্বসম্পন্ন বিষয় জড়িত রয়েছে, সংশ্লিষ্ট মামলার
মীমাংসার জন্য যার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রয়োজন, তাহলে হাইকোর্ট
বিভাগ উক্ত আদালত হতে মামলাটি প্রত্যাহার করে নিবেন এবং-(ক) স্বয়ং
মামলাটি নিষ্পত্তি করতে পারেন; অথবা (খ) আইনের প্রশ্নটির নিষ্পত্তি
করতে পারেন এবং উক্ত প্রশ্ন সম্বন্ধে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের নকলসহ
যে আদালত হতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল, সেই আদালতে (বা অন্য
কোন অধস্তন আদালতে) মামলাটি ফেরৎ পাঠাবেন এবং তা প্রাপ্ত হবার পর
সেই আদালত উক্ত রায়ের সাথে সঙ্গতি রক্ষা করে মামলাটির নিষ্পত্তি
করতে প্রবৃত্ত হবেন।
উপর্যুক্ত বিধানাবলী ছাড়াও, দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১১৩ ধারা
হাইকোর্ট বিভাগকে যেকোনো অধস্তন
আদালত কর্তৃক রেফারেন্সের মাধ্যমে উল্লেখিত মামলার বিষয়ে মতামত ও
আদেশ প্রদানের এখতিয়ার প্রদান
করে। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১৬০ ধারার অধীনে হাইকোর্ট বিভাগ আয়কর
সম্পর্কিত রেফারেন্স মামলা
শোনার বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। দেওয়ানী কার্যবিধির ২৪ ধারায় দেওয়ানী
আদালতের মামলা স্থানান্তর এবং
ফৌজদারী কার্যবিধির ৫২৬ ধারায় অধস্তন আদালতের ফৌজদারী এখতিয়ারাধীন
মামলা ̄স্থানান্তর সম্পর্কে বলা
হয়েছে।
লয়াজিমা আদালত:
মাননীয় রেজিস্ট্রার মহোদয় লয়জিমা আদালতের সভাপতিত্ব করেন। এ আদালত
মামলাগুলি শুনানীর জন্য
প্রস্তুত করার পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে কাজ করে।